হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসরায়েলের কোনো প্রত্যাশা তো পূরণ হয়ইনি বরং এখন ইসরায়েলের ভেতর থেকেই অনেকেই বলছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছিল একটি গুরুতর ভুল। কারণ, নেতানিয়াহু আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর জনপ্রিয়তায় আঘাত তো হানতে পারেনইনি, বরং তাঁর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সুতরাং ইসরায়েলি বা মার্কিন কোনো কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নেতার উদ্দেশে প্রকাশিত যেকোনো বার্তা বা চিঠিকে সেই ১২ দিনের যুদ্ধের মানসিক অংশ হিসেবেই দেখা উচিত। সম্প্রতি, ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ইয়োভ গ্যালান্ট সর্বোচ্চ নেতাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। যদিও এটি ইসরায়েলের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ কৌশলের ধারাবাহিকতা, তবে চিঠির অন্তঃসার ও প্রেক্ষাপটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।
তাঁর দীর্ঘ ত্রিশ বছরের পর্যবেক্ষণের আলোকে গ্যালান্ট আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী সম্পর্কে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন তা নিম্নরূপ:
১. একটি শক্তিশালী ইরান গঠনের নিরলস প্রচেষ্টা
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী গত তিন দশক ধরে ইরানকে অঞ্চলের শীর্ষ শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আশুরার রাতে তাঁর অনুরোধে “এই ইরান” গান পরিবেশনের ঘটনা তাঁর দেশপ্রেম ও জাতীয় শক্তি নির্মাণের গভীর মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
২. ইসরায়েলবিরোধী কৌশলগত বলয় নির্মাণ
গ্যালান্টের মতে, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী গত ৩০ বছর ধরে ইসরায়েল নামক হিংস্র শত্রুর বিরুদ্ধে ধীর ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন লড়াই চালিয়ে গেছেন। তিনি ইসরায়েলকে ঘিরে একটি কৌশলগত “আগুনের বলয়” তৈরি করেছেন—দক্ষিণে হামাস, উত্তরে হিজবুল্লাহ, পূর্বে ইরাক ও সিরিয়া, এবং দক্ষিণ-পূর্বে ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন।
৩. এই বলয় এক কৌশলগত আদর্শ, সামরিক নয়
যদিও গ্যালান্ট দাবি করেছেন এই বলয় দুর্বল হয়ে পড়েছে, বাস্তবে তিনি এর আদর্শিক ভিত্তি ও গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেননি। এটি সামরিক নয়, বরং আদর্শিক বলয়ে গঠিত—যা দৃশ্যত নিস্তেজ হলেও যেকোনো মুহূর্তে আবার জ্বলে উঠতে পারে। এই বলয় বিলুপ্ত নয়, বরং পুনর্গঠনের ক্ষমতা রাখে।
৪. ইসরায়েলের পতনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল
গ্যালান্ট বলেন, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর প্রণীত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ণাস্ত্র কৌশল ইসরায়েলবিরোধী লড়াইয়ের মূল চালিকাশক্তি। এই কৌশলের ধারাবাহিকতা বিগত দশকগুলোতে যেমন পরিলক্ষিত হয়েছে, তেমনি সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধ, লেবানন থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত প্রতিরোধ ফ্রন্টের তৎপরতা এবং ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে নতুনভাবে স্পষ্ট হয়েছে।
৫. গ্যালান্টের হতাশা ও আত্মবিশ্বাসহীনতা
চিঠির শুরু থেকেই গ্যালান্টের মাঝে এক ধরনের হতাশা ও সংশয় লক্ষণীয়—যা চিঠির শেষ দিকে আরও প্রকট হয়েছে। তিনি বুঝতে পারছেন, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তাঁর আঞ্চলিক, পরমাণু ও প্রতিরক্ষা কৌশল থেকে এক চুলও পেছাননি। বরং ইরান প্রতিরোধ বলয় পুনর্গঠনে, পারমাণবিক কর্মসূচি ত্বরান্বিত করতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি বাড়াতে সক্ষম।
৬. শেষ পর্যন্ত আলোচনার প্রস্তাব
চিঠির শেষাংশে গ্যালান্ট ‘যুদ্ধ নয়, আলোচনা’পর্বে আলোচনার একটি পরোক্ষ প্রস্তাব দেন। একজন সেনা কর্মকর্তার এমন প্রস্তাব এই বার্তা দেয় যে, তাঁর আগের সব হুমকিই এখন অর্থহীন। কারণ, সামরিক চাপ ব্যর্থ হয়েছে এবং যুদ্ধের বিকল্প খোঁজা ছাড়া আর উপায় নেই।
গালান্টের এই চিঠি মূলত ইরানকে এক ধরনের বার্তা—ইসরায়েল নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ চায় না। এটি একরকম পরোক্ষ অনুরোধ যেন ইরান যুদ্ধের অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে আসে। কারণ, ইসরায়েল জানে এবার যুদ্ধ হলে পরিস্থিতি তাদের জন্য আরও বিপর্যয়কর হতে পারে।
আপনার কমেন্ট